এইনগরে অনলাইন ডেস্ক: কাল থেকে শিথিল হচ্ছে বিধিনিষেধ। জীবিকার প্রশ্নে এটা করা হলেও জীবনের প্রশ্নে উদ্বেগ বাড়ছে। লকডাউন যদিও স্থায়ী সমাধান নয়, তারপরও করোনা সংক্রমণ কমাতে অন্যতম পন্থা। এ পরিস্থিতিতে বিশেষজ্ঞরা গুরুত্ব দিচ্ছেন স্বাস্থ্যবিধি পালনে কঠোর হওয়া ও গণটিকাদান অব্যাহত রাখায়
স্বাস্থ্যবিধিই এখন প্রধান রক্ষাকবচ
অধ্যাপক কামরুল হাসান খান
করোনা মোকাবিলায় লকডাউন কোনো সমাধান নয়। তবে একবারে উঠিয়ে না দিয়ে ধাপে ধাপে লকডাউন উঠানো উচিত ছিল। কেননা লকডাউনের ক্ষেত্রে সরকার বিভিন্ন সময় যে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল সবই সঠিক ছিল। কিন্তু মাঝে মাঝে লকডাউন তুলে দেওয়ায় সমস্যা হয়। যেমন পহেলা জুলাই থেকে ১৪ জুলাই পর্যন্ত লকডাউন ছিল। কিন্তু ১৫ জুলাই থেকে ২২ জুলাই পর্যন্ত শিথিল করা হয়। এর ফলে কুরবানির ঈদে প্রায় ১ কোটি ৪০ লাখ মানুষ গ্রামে চলে যায়। এক্ষেত্রে সাধারণ মানুষের সহযোগিতার অভাব ছিল। ঈদুল ফিতরেও একই অবস্থা হয়েছিল।
প্রধানমন্ত্রী নিজেই বলেছিলেন, যে যেখানে আছেন সেখানেই ঈদ করুন। কিন্তু কেউ কথা শুনল না। মানুষকে আটকানো যাচ্ছে না। ২৩ তারিখ থেকে আবার কঠোর লকডাউন শুরু হলো। কয়দিন যেতে না যেতেই পোশাক কারখানা মালিকরা রপ্তানি ধ্বংস হচ্ছে বলে তদবির করতে লাগলেন। আবারও শিথিল করা হলো লকডাউন। খুলে দেওয়া হলো পোশাক কারখানা।
১১ তারিখ থেকে লকডাউন উঠে গেলে স্বাস্থ্যবিধিই হবে প্রধান রক্ষাকবচ। সেই সঙ্গে টিকা কার্যক্রম চালাতে হবে। এ ছাড়া স্বাস্থ্যবিধি মানানোর জন্য কঠোর হতে হবে। কেননা সাধারণ মানুষ সচেতন হচ্ছে না। এটা তো শুধু সরকারের দায়িত্ব নয়। চিকিৎসকরাও কঠোর পরিশ্রম করতে করতে আক্রান্ত হয়ে যাচ্ছেন। এক্ষেত্রে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। সবাইকে দায়িত্ববোধ নিয়ে কাজ করতে হবে।
লেখক : প্রাক্তন উপাচার্য, বিএসএমএমইউ
ভয়াবহ ঝুঁকি তৈরি হতে পারে
অধ্যাপক বেনজির আহমেদ
এখনো দেশে সংক্রমণের হার অনেক বেশি। এই সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে লকডাউন অন্যতম একটি কার্যকর পদ্ধতি। এমন অবস্থায় লকডাউন উঠিয়ে নিলে ভয়াবহ ঝুঁকির দিকে যেতে পারে। কেননা বাস, ট্রেন, লঞ্চ ও বিমান এতদিন বন্ধ ছিল। এখন যদি খুলে যায় তাহলে প্রতিদিন কোটি মানুষ এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যাবে। ফলে করোনার সংক্রমণ এক জেলা থেকে অন্য জেলায় যাবে। সারা দেশ থেকে ঢাকায় আসবে। আবার ঢাকা থেকেও সারা দেশে ছড়িয়ে যেতে পারে। তবে কতটুকু সংক্রমণ বাড়বে সেটি এ মুহূর্তে বলা যাচ্ছে না। কিন্তু বিষয়টি উদ্বেগজনক।
সংক্রমণজনিত সমস্যায় যেমন ব্যক্তি কষ্ট ভোগ করেন, তার জীবন ঝুঁকির মুখে পড়ে। তেমনি ওই ব্যক্তির পরিবার ও অর্থনীতি সবই ঝুঁকিতে পড়ে যায়।
১১ তারিখ থেকে লকডাউন উঠে গেলে এর ১৪ দিন পর অর্থাৎ ২৫ তারিখ থেকে কি হবে সেটি এখনো বলা যাচ্ছে না। তবে সার্বিক দিক বিবেচনা করে এটিই বলা যায়, লকডাউন না থাকলে করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধির শঙ্কাই বেশি। লকডাউন তুলে দেওয়ার আগে এ দিকটি বিবেচনা করা উচিত ছিল।
লেখক : প্রাক্তন পরিচালক, রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখা, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর
শাঁখের করাতের মধ্যে পড়েছে গরিবরা
ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য
লকডাউন উঠে গেলে জনস্বাস্থ্যের কী হবে সেটি আমি বলতে পারব না। সেটি বলবেন স্বাস্থ্যের বিশেষজ্ঞরা। কিন্তু অর্থনৈতিক দিক দিয়ে দেখলে লকডাউন কোনো সমাধান নয়। বিভিন্ন বিধিনিষেধের মধ্য দিয়ে অর্থনৈতিক কার্যক্রম চালু করাটাই উচিত। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে গরিব মানুষ যেদিকেই যাবেন সেদিকেই বিপদ। অর্থাৎ তারা শাঁখের করাতের মধ্যে পড়েছে। এই সময়ে কাজে যোগ দিতে গেলে করোনা সংক্রমণের কারণে তাদের জীবন বিপন্ন হতে পারে। আবার কাজ না করে ঘরে বসে থাকলে না খেয়ে মরার উপক্রম হচ্ছে। কেননা সরকার যেহেতু গরিবদের জন্য কোনো সাহায্য-সহযোগিতার ব্যবস্থা করতে পারেনি। তাই তাদের ঘরে বসে না খেয়েই থাকতে হয়।
এ অবস্থায় লকডাউন খুলে দেওয়াটা এক দিক দিয়ে ঠিকই আছে। আবার জনস্বাস্থ্যের কথা চিন্তা করলে সেটি ঠিক নয়। তবে প্রধান যে কার্যক্রম সরকারকে চালাতে হবে তা হলো গণটিকা কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে হবে। সেই সঙ্গে স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব মানার কোনো বিকল্প নেই। এ বিষয়ে জনগণকে যেমন সচেতন হতে হবে, তেমনি সরকারকেও স্বাস্থ্যবিধি মানানোর জন্য কঠোর হতে হবে।
লেখক : বিশেষ ফেলো, সিপিডি, যুগান্তর থেকে
Leave a Reply