করোনাভাইরাসের টিকা পাওয়া প্রথম রোহিঙ্গা শরণার্থী মোহাম্মদ শফি। ছবি: ইউএনএইচসিআর
সুশান্ত পাল বাচ্চু, কক্সবাজার থেকে: সরকারের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের ৩৪টি রোহিঙ্গা শিবিরে আজ করোনা ভাইরাসের টিকা প্রদান শুরু হয়েছে। জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মায়ানমারের নাগরিকদের ৫৫ বছরের ঊর্ধ্বে প্রায় ৪৯ হাজার রোহিঙ্গা এ কর্মসূচিতে প্রথম অগ্রাধিকার পাচ্ছেন।
আজ সকালে উখিয়ার শরণার্থী ক্যাম্প এক্সটেনশন-৪ এ আনুষ্ঠানিকভাবে রোহিঙ্গাদের ভ্যাকসিন প্রদান কার্যক্রমের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন শরনার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার শাহ রেজওয়ান হায়াত। কক্সবাজারের সিভিল সার্জন ডাক্তার মাহবুবুর রহমান ভ্যাকসিন কার্যক্রমের সভাপতিত্ব করেন।
এসময় বক্তারা বলেন, রোহিঙ্গাদের সরকারের উদ্যোগে চীনের তৈরি সিনোফার্মার ভ্যাকসিন শিবিরের ৫৬টি টিকা কেন্দ্রে ভ্যাকসিন দেওয়া হচ্ছে। কেন্দ্রে প্রয়োজনীয় ভ্যাকসিনেটর, নার্স, টেকনেশিয়ানসহ স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। প্রতিদিন কমপক্ষে ৭ হাজার রোহিঙ্গাকে টিকা দিয়ে সপ্তাহর মধ্যে প্রথম ডোজ টিকাদান সম্পন্ন করার নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এতে উপস্থিত ছিলেন, ইউএনএইচসিআরের কক্সবাজার অফিস প্রধান ইতা সুটে, ১৪ এপিবিএন এর অধিনায়ক নাঈমুল হক, ক্যাম্প ইনচার্জসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে, করোনাভাইরাস প্রতিরোধে চলমান ৬ দিনের গণ টিকাদান কর্মসূচির চতুর্থ দিন মঙ্গলবার কক্সবাজারের একটি ক্যাম্পে ৬৪ বছর বয়সী রোহিঙ্গা শরণার্থী মোহাম্মদ শফিকে প্রথম কোভিড টিকা নেওয়ার কথা জানান।
প্রথম পর্যায়ে ৫৫ বছর বা তার বেশি বয়সী ৪৮ হাজার ৪০০ জন রোহিঙ্গা এই টিকা পাবেন বলে জানিয়েছেন শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের কার্যালয়ের স্বাস্থ্য সমন্বয়কারী ডা. আবু তোহা।

সকাল থেকে রোহিঙ্গাদের জন্য খোলা বেশ কয়েকটি টিকাকেন্দ্র ঘুরে দেখার কথা জানিয়ে আবু ডা. তোহা বলেন, “সব কেন্দ্রই মানুষে পরিপূর্ণ।”
১৩ ও ১৫ অগাস্ট ছাড়া আগামী ১৮ অগাস্ট পর্যন্ত রোহিঙ্গাদের টিকা দেওয়ার এই কর্মসূচি চলবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
“৫৫ বছরের বেশি বয়সী যারা, তারা সবাই টিকা পাবেন। এরপর স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা অনুযায়ী টিকার পর্যাপ্ততার ভিত্তিতে অন্যদের টিকা দেওয়া হবে।”

কক্সবাজার, টেকনাফ আর উখিয়ায় ৩৪টি ক্যাম্প মিলিয়ে মোট সাড়ে ৬ হাজার একর জমিতে গাদাগাদি করে বসবাস করছে ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা।
সরকারি হিসাবে এখন পর্যন্ত প্রায় তিন হাজার রোহিঙ্গা কোভিডে আক্রান্ত হয়েছেন, মৃত্যু হয়েছে ২৯ জনের।
রোহিঙ্গারা আগ্রহ নিয়ে টিকা নিতে আসছেন জানিয়ে কক্সবাজার জেলার সিভিল সার্জন মাহবুবুর রহমান বলেন, “টিকা নেওয়ার জন্য তাদের যথেষ্ট আগ্রহ রয়েছে। তারা লাইনে দাঁড়িয়ে একে একে টিকা নিচ্ছে।”
উখিয়া ও টেকনাফের ৩৪টি ক্যাম্পের ৫৮টি টিকাকেন্দ্রে টিকাদান কর্মসূচি চলছে। সেখানে দেওয়া হচ্ছে চীনের সিনোফার্মের টিকা।

বর্তমানে দেশে মডার্না ও সিনোফার্মের পাশাপাশি দ্বিতীয় ডোজ হিসেবে অ্যাস্ট্রাজেনেকা এবং ফাইজারের টিকা দেওয়া হচ্ছে।
Leave a Reply