এইনগরে অনলাইন ডেস্ক: একদিকে করোনায় আক্রান্ত মায়ের জীবন বাঁচানো, অন্যদিকে তাঁর গর্ভে বেড়ে ওঠা প্রাণটিকে আলো দেখানো—এ রকম একটা যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছিলেন চিকিৎসক ও নার্সরা। কোভিড ওয়ার্ডের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন প্রসূতি ঝুমা আকতারকে (২৩) ঘণ্টায় ৬০ লিটার করে অক্সিজেন দেওয়া হচ্ছিল। হাই ফ্লো নাজাল ক্যানুলা দিয়ে চলছিল অক্সিজেন সরবরাহ। এ অবস্থায় ওঠে প্রসবব্যথা। চরম উৎকণ্ঠা আর দুশ্চিন্তা শুরু হয় পরিবারের সদস্যদের। চিন্তার ভাঁজ দেখা দেয় চিকিৎসকদের কপালেও।
শেষ পর্যন্ত বিজয়ের হাসি হেসেছেন চট্টগ্রামের মা ও শিশু জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসক ও নার্সরা। আর প্রথম মাতৃত্বের স্বাদ পাওয়া তরুণী ঝুমা আক্তার হাই ফ্লো অক্সিজেন মাস্ক লাগানো অবস্থায় হাত উঁচু করে দেখালেন ‘ভি’ চিহ্ন, এ যেন ভুবন জয়ের আনন্দ।বিজ্ঞাপন
গতকাল বৃহস্পতিবার রাত নয়টায় নগরের আগ্রাবাদ মা ও শিশু জেনারেল হাসপাতালের কোভিড আইসিইউ ওয়ার্ডে স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় ঝুমা জন্ম দেন তাঁর প্রথম সন্তানের। নবজাতক মেয়েটির মুখ দেখে এক ফোঁটা আনন্দাশ্রুও গড়িয়েছে বাবা আবদুল মোতালেবের চোখে।
মোতালেবের বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায়। পিবিডির প্রকৌশলী স্ত্রীকে নিয়ে থাকেন চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে। স্ত্রী করোনায় আক্রান্ত হন কয়েক দিন আগে। পাশাপাশি প্রথম সন্তানের জন্মের দিনক্ষণও এগিয়ে আসছিল। এ নিয়ে দুশ্চিন্তার শেষ ছিল না তাঁর। কোনো হাসপাতাল তাঁকে ভর্তি করাতে চায়নি। এ অবস্থায় মোতালেব মা ও শিশু হাসপাতালে যান। সেখানে ঝুমাকে ভর্তি করানো হয়।বিজ্ঞাপন
মোতালেব বলেন, ‘২৮ জুন স্ত্রীকে ভর্তি করি। এরপর তাঁর শ্বাসকষ্ট হচ্ছিল। আইসিইউতে নিয়ে যাওয়া হয়। অনেক টেনশনে ছিলাম। পরে সেখানেই নরমাল ডেলিভারি হয়। আল্লাহর কাছে অনেক শুকরিয়া।’
তবে প্রক্রিয়াটি খুব সহজ ছিল না। এই প্রসূতি ভর্তি হওয়ার পর থেকে চিকিৎসকদের চিন্তা বাড়ছিল। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক মাহাদী হাসানের তত্ত্বাবধানে ছিলেন ঝুমা আক্তার। কীভাবে মা ও সন্তানকে বাঁচানো যায়, এ নিয়ে ছিল চিকিৎসকদের ভাবনা। গতকাল আইসিইউর চিকিৎসক ফাহিম রেজা, মাকসুদা হক, জ্যেষ্ঠ নার্স রূপনা বড়ুয়াসহ অন্যদের তত্ত্বাবধানে শিশুটি পৃথিবীর আলো দেখে কোভিড আইসোলেশন ওয়ার্ডেই। সেখানে লেবার কক্ষের অনেক যন্ত্রপাতি নিয়ে আসা হয়েছিল।

সহকারী অধ্যাপক ফাহিম রেজা বলেন, ‘খুব সহজ ছিল না কাজটি। যদি অস্ত্রোপচার করতে হতো, তাহলে ঝুঁকিতে পড়তে হতো। কারণ, মা তখন ৬০ লিটার অক্সিজেন পাচ্ছেন। শেষ পর্যন্ত নরমাল ডেলিভারি সম্ভব হয়েছে চিকিৎসক ও নার্সদের চেষ্টায়। এখন মা ও মেয়ে ভালো আছে। সবচেয়ে বড় কথা হলো, মা অনেক সাহসী ছিলেন। তিনি ভেঙে পড়েননি।’
ঝুমা আক্তার এখনো আগের মতোই অক্সিজেন পাচ্ছেন। নবজাতকের ওজন আড়াই কেজি। তাকে পাশের একটি কেবিনে রাখা হয়েছে। মায়ের বুকের দুধ সংগ্রহ করে নিয়ে শিশুটিকে দেওয়া হচ্ছে। এমন নবজাতকের করোনার ঝুঁকি কম, বললেন ফাহিমা রেজা।
মা ও শিশু হাসপাতালে এর দুই মাস আগেও এক করোনা রোগী সন্তানের জন্ম দিয়েছিলেন। কিন্তু তাঁর অবস্থা এ রকম সংকটাপন্ন ছিল না।
হাসপাতালের পরিচালক মো. নুরুল হক বলেন, ‘সবার চেষ্টায় মা ও সন্তানের জীবন এ যাত্রা বাঁচাতে পেরেছি। মাকে আরও চিকিৎসা নিতে হবে।’ প্রথম আলো
Leave a Reply