এইনগরে অনলাইন ডেস্ক: বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মতো বাংলাদেশেও করোনাভাইরাসের সংক্রমণ উদ্বেগজনক হারে বেড়েই চলছে। দেশে ২৪ ঘণ্টায় করোনায় ৩৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে করোনায় দেশে ২৮ হাজার ৩৬৩ জনের মৃত্যু হলো।
এ সময়ে নতুন করে শনাক্ত হয়েছেন ১২ হাজার ১৮৩ জন। এ নিয়ে মোট শনাক্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৭ লাখ ৮৫ হাজার ৩৩২ জনে।
রোববার স্বাস্থ্য অধিদফতরের নিয়মিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়।
এতে বলা হয়, গত একদিনে দেশে মোট ৪৩ হাজার ৬ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। তাতে শনাক্তের হার দাঁড়িয়েছে ২৮ দশমিক ৩৩ শতাংশে।
গত ২৪ ঘন্টায় সুস্থ হয়েছেন ২ হাজার ১৬৭ জন। এ নিয়ে মোট সুস্থ হলেন ১৫ লাখ ৬৫ হাজার ৬৪৫ জন।
দেশে করোনাভাইরাসের প্রথম সংক্রমণ ধরা পড়েছিল ২০২০ সালের ৮ মার্চ। প্রথম রোগী শনাক্তের ১০ দিন পর ওই বছরের ১৮ মার্চ দেশে প্রথম মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। সেই বছর সর্বোচ্চ মৃত্যু হয়েছিল ৬৪ জনের।
ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়ে পড়ায় গত বছর জুন থেকে রোগীর সংখ্যা হু-হু করে বাড়তে থাকে। ২৮ জুলাই একদিনে সর্বোচ্চ ১৬ হাজার ২৩০ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছিল।
২০২১ সালের ৭ জুলাই প্রথমবারের মতো দেশে করোনায় মৃতের সংখ্যা ২০০ ছাড়িয়ে যায়। এর মধ্যে ৫ ও ১০ আগস্ট ২৬৪ জন করে মৃত্যু হয়, যা মহামারির মধ্যে একদিনে সর্বোচ্চ মৃত্যু। এরপর বেশকিছু দিন ২ শতাধিক মৃত্যু হয়।
এরপর গত ১৩ আগস্ট মৃত্যুর সংখ্যা ২০০ এর নিচে নামা শুরু করে। দীর্ঘদিন শতাধিক থাকার পর গত ২৮ আগস্ট মৃত্যু ১০০ এর নিচে নেমে আসে।
২০২০ সালের এপ্রিলের পর গত বছরের ১৯ নভেম্বর প্রথম করোনাভাইরাস মহামারিতে মৃত্যুহীন দিন পার করে বাংলাদেশ। সর্বশেষ দ্বিতীয়বারের মতো ৯ ডিসেম্বর মৃত্যুশূন্য দিন পার করেছে দেশ।
ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত পরিস্থিতি অনেকটা নিয়ন্ত্রণেই ছিল। কিন্তু এরমধ্যেই বিশ্বে শুরু হয় ওমিক্রন ঝড়। ৩ জানুয়ারি দৈনিক শনাক্তের হার ৩ শতাংশ এবং ৬ জানুয়ারি তা ৫ শতাংশ ছাড়ায়। এরপর থেকে সংক্রমণ উদ্বেগজনক হারে বাড়তে শুরু করেছে।
এদিকে, করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের কোয়ারেন্টিনে থাকার সময়সীমা কমানো হয়েছে। কোভিড আক্রান্ত হলে এখন থেকে ১৪ দিনের পরিবর্তে ১০ দিন কোয়ারেন্টিনে থাকলেই হবে।
দেশে করোনাভাইরাসের ঊর্ধ্বমুখী সংক্রমণের মধ্যেই রোববার এ তথ্য জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
দেশের কোভিড পরিস্থিতি নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়মিত ভার্চুয়াল বুলেটিনে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার লাইন ডিরেক্টর এবং মুখপাত্র অধ্যাপক ডা. মো. নাজমুল ইসলাম এ কথা জানান।
তিনি বলেন, করোনা পরীক্ষায় পজিটিভ এলে আমরা এখন ১০ দিনের জন্য কোয়ারেন্টিনের কথা বলব। জ্বর ভালো হয়ে গেলে, উপসর্গগুলো চলে গেলে ১০ দিন পরে তিনি আবার কাজে ফিরে যাবেন। আগে শর্ত হিসেবে আরটি-পিসিআর সনদ নিয়ে যেতে হতো, সেটি আপাতত আমরা স্থগিত রাখছি।
তিনি আরও বলেন, সবাই ওমিক্রনের উপসর্গ নিয়ে আলাপ-আলোচনা করছে। এর উপসর্গগুলো হলো— নাক দিয়ে পানি পড়া, মাথাব্যথা, অবসন্নতা, হাঁচি, গলাব্যথা, কাশি— এই বিষয়গুলো কারও থাকলে পরীক্ষা করাতে হবে। ঠাণ্ডা লেগে কারও গলা ভেঙে গেছে বা কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসছে, সেসব ক্ষেত্রেও চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত বলে জানান তিনি।
ডা. মো. নাজমুল ইসলাম বলেন, দেশে করোনা সংক্রমণের হার যেমনটি বেড়েছে, তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে আমাদের টিকা কর্মসূচিও বেগবান হয়েছে। যারা দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছেন এবং বুস্টার ডোজের জন্য যোগ্য বিবেচিত হয়েছেন, এমনকি যারা টিকার বার্তাও পেয়েছেন কিন্তু করোনা আক্রান্ত হওয়ার কারণে টিকা নিতে পারেননি, তারা সুস্থ হওয়ার ছয় সপ্তাহ পর বুস্টার ডোজ নিতে পারবেন।
অধিদপ্তরের মুখপাত্র আরও বলেন, ওমিক্রনের কারণে দেশে সংক্রমণ কয়েকগুণ বেড়েছে। আমরা যদি মৃত্যুর সংখ্যাটি দেখি, তা হলে দেখা যায় ডিসেম্বর পর্যন্ত মৃত্যুর সংখ্যা ৩-৪ জনে ছিলো। এখন মৃতের সংখ্যা কয়েকগুণ বেড়ে প্রতিদিন গড়ে ২০-২৫ জন মারা যাচ্ছে। কাজেই আমাদের আত্মতুষ্টিতে ভোগার কোনো সুযোগ নেই।
Leave a Reply